বিগত কয়েকবছর ধরে আছড়ে পড়া তিতলি, গাজা, ফানি, বুল্বুল দের তালিকার নাম আজ প্রায় শেষের মুখে। উত্তর ভারত মহাসাগরের উপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির এই সংক্ষিপ্ত, স্বতন্ত্র নামগুলির ব্যবহার গত কয়েক বছর ধরে হয়ে আসছে। ২০০৪ থেকে ২০২০ এই ১৬ বছরে ৮ টি সদস্য দেশ ৬৪ টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছিলেন , যার মধ্যে শেষতম ঘূর্ণিঝড় —“ আম্ফান “ এপ্রিলেই বাসা বেঁধেছে বঙ্গোপসাগরে । India Meteorological Department (IMD) এই সপ্তাহে ১৬৯ ঘূর্ণিঝড়ের নামের একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে এপ্রিল এর ২৮ তারিখ, ২০২০।এই সম্পূর্ণ তালিকাটি World Meteorological Department (WMO) দ্বারা ২০১৯ সালের এপ্রিল এ প্রকাশিত তালিকা থেকে গৃহীত হয়েছে । আম্ফানের পরে উত্তর ভারত মহাসাগর সহ আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপর সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নতুন প্রকাশিত তালিকা থেকেই হবে।
বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষণ, তাদের নামকরণ ও ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বজুড়ে ছয়টি আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্র Regional Specialized Meteorological Centre (RSMCs) এবং পাঁচটি আঞ্চলিক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা কেন্দ্র Regional Tropical Cyclone Warning Centers (TCDWCs) রয়েছে। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত TCDWCs হ'ল তাদের মধ্যে অন্যতম যে উত্তর ভারত মহাসাগরের অববাহিকার ১৩ টি দেশকে পরামর্শ দেয়: বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। এই তালিকায় যে নতুন ৫ টি দেশ এসেছে সেগুলি হলো: ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। India Meteorological Department এর নয়াদিল্লি তে অবস্থিত এই আঞ্চলিক কেন্দ্র টি বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর জুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্যও দায়বদ্ধ।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় নামকরণের অনুশীলনটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে সুপরিচিত আবহাওয়াবিদ ক্লেমেন্ট র্যাগ দ্বারা শুরু করা হয়েছিল বলে জানা যায়। শুরুতে ঝড়ের নাম নির্বিচারে রাখা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, আটলান্টিকের উপরে ১৮৪২ সালে একটি ঝড় আন্টজির হারিকেন হিসাবে পরিচিত ছিল কারণ এটি অ্যান্তজে নামের একটি নৌকার মাস্টটি ছিঁড়ে ফেলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই এই ধরণের আনুষ্ঠানিক নামকরণের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।
নতুন তালিকায় ১৩ টি সদস্য দেশগুলির জন্য ১৩ টি করে ঘূর্ণিঝড়ের নাম রয়েছে, মোট ১৬৯ টি। ভারতের নামগুলির মধ্যে রয়েছে গাতি, তেজ, মুরাসু, আগ, ব্যোম, ঝাড়, প্রবাহো, নীর, প্রভঞ্জন, ঘূর্ণি, আম্বুদ, জালধী ও ভেগা। আম্ফানের পরে নামকরণ শুরু হবে প্রথম তালিকা থেকে নিসারগা, গাটি ইত্যাদি দিয়ে শুরু। ১৩ টি ঘূর্ণিঝড়ের পরে, যখন তালিকা ১ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়ে যাবে , নামকরণ তালিকা ২ তারপর আবার শুরু হবে এবং এইভাবে নামকরণের ব্যবহার হতে থাকবে ।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ১৩ সদস্যের দেশগুলির মধ্যে আলোচনার এবং নামগুলির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। ঘূর্ণিঝড় নামকরণের বিভিন্ন মানদণ্ডের মধ্যে কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'ল: নামগুলি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিরপেক্ষ হওয়া উচিত, সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণ সহজ হওয়া উচিত। ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলির সর্বোচ্চ অনুমোদিত দৈর্ঘ্য হলো আটটি বর্ণ।
World Meteorological Organization(WMO) এর নির্দেশিকা অনুসারে, একটি ঘূর্ণিঝড় যদি বিশেষভাবে মারাত্মক বা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে তবে নামটি অবসরপ্রাপ্ত বলে ঘোষণা করা হয় এবং অন্য কোনও আঞ্চলিক ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আর কখনও ব্যবহৃত হয় না। WMO তথ্য অনুসারে, মাংখুত (ফিলিপাইন, ২০১৮), ইরমা এবং মারিয়া (ক্যারিবিয়ান, ২০১৭), হাইয়ান (ফিলিপাইন, ২০১৩), স্যান্ডি (ইউএসএ, ২০১২), ক্যাটরিনা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ২০০৫), মিচ (হন্ডুরাস, ১৯৯৮) এবং ট্রেসি (ডারউইন, ১৯৭৪) হ্যারিকেনের কিছু নাম যা এখন অবসর নিয়েছে।
Source: India Meteorological Department
Your email address will not be published. Required fields are marked *