পুষ্টিকর কালো চালের চাহিদা বাড়ছে..
রাজার আয়ু ও সুস্বাস্থ্য দীর্ঘকাল ধরে রাখতে জৈব পদ্ধতিতে এক ধরনের চাল নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতেই চাষ করা হতো। রাজা ও রাজপরিবারের সদস্য ছাড়া কারো এই চাল খাওয়ার অধিকার ছিল না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকত বলে, এই চাল কে নিষিদ্ধ চাল বলা হতো। এই চালকে ব্ল্যাক রাইস, ফরচুন রাইস, এম্পেরোর রাইস বা পার্পেল রাইস বা ফরবিডেন রাইসও বলা হয়। কথিত আছে চীন দেশে প্রায় 2000 বছর আগে রাজপরিবারের রাজত্বকালে এই সুগন্ধি ধানের চাষ হতো। আমাদের দেশের মধ্য প্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটকে বর্তমানে এই ধরনের চাষ হচ্ছে। মণিপুরে এই চালকে "চক হাও" বলা হয়। আসামেও চাষ হচ্ছে এই কালো চালের। এই কালো চালের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ওরিযা স্যাটাইভা লিন (Oriza Sativa Linn)।
অন্য চালের সাথে পার্থক্য-
ব্রাউন রাইস ও ব্ল্যাক রাইস এক নয়। সাধারণ ধানের খোসা ছাড়িয়ে যে লাল আস্তরণ যুক্ত চাল পাওয়া যায় তা হল ব্রাউন রাইস। এই চাল উপকারী কিন্তু এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বর্তমান থাকে। অন্যদিকে ব্ল্যাক রাইস একপ্রকার ব্রাউন রাইস কিন্তু সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে তৈরি। এখনো পর্যন্ত বাজারে সরু ও পালিশ করা চকচকে চালের চাহিদা বেশি কিন্তু দৃষ্টিনন্দন এই চালের পুষ্টিগুণ প্রায় নেই বললেই চলে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন চালের উপরে যে পাতলা খোসা থাকে সেটির মধ্যেই আবদ্ধ থাকে পুষ্টিগুণ চালের খোসায় থাকে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট সহ ভিটামিন-বি, প্রোটিন, ফাইবার। রাইস মিলে ধান ভাঙানোর পর সেই খোসা উঠে যাওয়ায় সেসব নষ্ট হয়ে যায়। চালের মধ্যে থেকে যায় চাষের সময় প্রয়োগ করা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবশেষ। দেখতে সুন্দর লাগার জন্য রাইস মিলের চাল পালিশ করে দেওয়ায় 60-70 ভাগ পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন দেখতে ভালো না হলেও ব্ল্যাক রাইস এর মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ লোহা, জিংক ও ফাইবার।
কি কি উপকার পাওয়া যায়-
সাদা ভাতের সঙ্গে পথ্য হিসাবে সপ্তাহে অন্তত 2-3 দিন একবাটি পরিমাণমতো খাওয়া যেতে পারে। কম শর্করাযুক্ত ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় মধুমেয় রোগীরা অনায়াসে এই চালের ভাত খেতে পারেন। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে ওজন কমাতেও বিশেষ উপকারী এই চালের ভাত। আঠালো চটচটে কিন্তু সুগন্ধি। রান্না করলে সারা বাড়ি গন্ধে ম-ম করে। লোহা ও জিংক সমৃদ্ধ এই চাল পায়েস, খিচুড়ি, ঘি ভাত, পাস্তা, নুডুলস করা যায়। রান্নার সময় চাল ধোয়া জল হাঁড়ির মধ্যে ছাকনি দ্বারা ছেকে দিয়ে দিতে হবে, ফ্যান ফেলা যাবে না, সবটাই পথ্য, ওষুধের মতো কাজ করবে। এই চালে ক্যান্সার প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় অ্যান্থোসায়ানিন ও ভিটামিন ই থাকায় শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
কিভাবে চাষ হয়-
আষাঢ় মাসের শেষে অথবা শ্রাবণের প্রথমে ধান রোয়া শুরু হয়। অল্প কাঠি দিলেই চলে। একশো কুড়ি দিনের ফসল। সম্পূর্ণ জৈবসারে চাষ করা হয়, রাসায়নিক সার ও পেস্টিসাইড দিলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে। বিঘা প্রতি 6-7 মন ফলন পাওয়া যায়।বাজারে এই চাল বিভিন্ন শপিংমলে বা জৈব কৃষি হাটে পাওয়া যায়, অনলাইনে এই চালের দাম অনেক বেশি। দেশীয় বাজারে প্রতি কেজি 150 থেকে 170 টাকায় বিক্রি হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *