ভারতে পাওয়া যায় একটি অদ্ভুত প্রাণী হচ্ছে শঙ্খচূড় সাপ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর সাপ শঙ্খচূড়। এরা ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে বাংলাদেশ-মায়ানমার ভিয়েতনাম হয়ে ফিলিপাইন পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।
এদের বৈজ্ঞানিক নাম অফিওফ্যাগাস হান্না। অর্থাৎ সাপখাদক। ইংরেজিতে এদের চমৎকার একটি নাম আছে—হ্যামাড্রাফড; অবশ্য অল্প লোকই এই নামে তাদের চেনে।
এদের প্রচলিত ইংরেজি নাম কিং কোবরা, যেটা বাংলায় রাজগোখরো। দেখতে এরা কিছুটা গোখরোদের মতো। ফণাও তোলে, তবে সে ফণা গোখরোর ফণার মতো সুগঠিত না। অনেকটা লম্বাটে ধরনের। সাপ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এরা গোখরোদের কাছাকাছি হলেও প্রকৃত গোখরো না।
ভারতে মূলত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্য এর বাসভূমি হলেও জম্মু-কাশ্মীরের কিছু অংশ উড়িষ্যার জঙ্গল মধ্যপ্রদেশ ছত্রিশগড় ঝারখন্ড এর জঙ্গলে,পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বের মেঘালয় আসামের পাহাড়ি এলাকাতে এদের দেখা মেলে ।
শঙ্খচূড় সাপ সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য-
1.পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর সাপ।
2.এই সাপটি ইলাপিড গোত্রের।
3.এদের পুরো শরীর জলপাই রঙের ওপর হলুদ বলয় থাকে।
4.এদের ফণায় কোন দাগ বা চিহ্ন থাকে না যেরকম কেউটে বা গোখরোর ফণার দাগ থাকে।
5.উপরের চোয়ালে দুটি ফ্যাং এবং 3-5 ম্যাক্সিলার দাঁত রয়েছে এবং নীচের চোয়ালে দুটি সারি দাঁত রয়েছে।
6.কিং কোবারার বিষে সাইফোটোক্সিন এবং নিউরোটক্সিন থাকে,কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, ফলে প্রচণ্ড ব্যথা, অস্পষ্ট দৃষ্টি, ভার্চিয়া, তন্দ্রা এবং অবশেষে পক্ষাঘাত দেখা দেয়। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যর্থতার কারণে শীঘ্রই মৃত্যু ঘটে।
7.ওহিনিন, এই বিষের একটি প্রোটিন উপাদান।
8.এদের এক ছোবলে যতটা বিষ নির্গত হয় তা একটা পূর্ণবয়স্ক হাতিকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট।
9.এটি প্রতি ছোবলে 420 মিলিগ্রাম (6.5 জিআর) পর্যন্ত বিষ সরবরাহ করতে পারে।
10.একে বিশাল আকৃতি, তার ওপর মারাত্মক পরিমাণ বিষ ধারণ করে। তার ওপর মুখ হাঁ করে তেড়ে আসা, ফণা তুলে মাটি থেকে চার-পাঁচ ফুট উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া শঙ্খচূড়কে দিয়েছে অতিপ্রাকৃত গুণ।
11.ঘন জঙ্গল এদের প্রকৃত বাসস্থান।
12.এদের প্রধান খাদ্য যেকোনো সাপ হলেও এরা পছন্দ করে ইন্ডিয়ান রেট স্নেক, বাংলায় যাকে বলে ঢ্যামনা সাপ।
13.ভারতের ওডিশায় এই সাপকে অহিরাজ বা সাপের রাজা বলে ডাকা হয়।
14.এরা লম্বায় প্রায় 18 থেকে 19 ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
15.কুইন কোবরা কিং কোবরার থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট হয়।
16.কিং কোবরা সাপ মনোগ্যামাস।
17.কিং কোবরা তার সঙ্গিনীকে অন্য কোন পুরুষ কিং কোবরা সাথে মিলিত হতে দেয় না, যদি পুরুষ কিং কোবরা কখনো বুঝতে পারে যে তার সঙ্গিনী অন্য কোন পুরুষ কিং কোবরা সাথে যৌন সম্পর্কে মিলিত হয়েছে .তাহলে সেই পুরুষ কিং কোবরা টি রাগের বশে নৃশংসভাবে সেই স্ত্রীকে মেরে ফেলে এবং মেরে ফেলার পর তাকে গিলে খেয়ে নেয়।
18.কুইন কোবরা বা স্ত্রী গোখরা ডিম পাড়ার সময় শুকনো লতা পাতা দিয়ে ঢিবির মত বাসা বানায়। এই বাসাগুলোয় ২০ থেকে ৪০ টি পর্যন্ত ডিম থাকে। প্রায় ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিন লাগে ডিম থেকে বাচ্চা হতে।
19.শঙ্খচূড় সাপের বাচ্চা বয়স্ক শঙ্খচূড়এর মতই বিষাক্ত।
20.এরা সাধারণত মানুষ জনকে এড়িয়ে চলে, লোকালয়ে আসে না তবে খাদ্যের সন্ধানে মাঝেমধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
21.গড় আয়ু প্রায় 20 বছর।
Your email address will not be published. Required fields are marked *