আমরা জানি একক আয়তনে পৃথিবীর সবথেকে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান কিংবা উড়িষ্যার ভিতরকণিকার নাম আমরা অল্পবিস্তর সবাই জানি। এছাড়া ভারতের বুকে আরো একটি সুন্দর ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে যা হয়ত অনেকের কাছেই অজানা- তার নাম পিছাভারাম। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের কাছে আকর্ষণীয়, অসাধারণ ,রোমাঞ্চে ভরা জায়গাটি অবশ্যই ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি প্রথমে থিলাই ভানা নামে পরিচিত ছিল। পিছাভারাম ম্যানগ্রোভ অরণ্য তামিলনাড়ুর পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে 1100 হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এই জঙ্গলে 50 টির বেশি দ্বীপ এবং 4500 এর বেশি ছোট বড় খাল রয়েছে ।এই জঙ্গলের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না ।সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ,এখানের ছোট ছোট খালগুলি খুবই দুর্গম ,এখানকার গাছগুলো যেন এইসব খালের ওপর এতটাই ঝুকে আছে যে, তা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ।এখানকার গাছপালাগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে বেঁকে থাকে। পাখির কুজন ও দূরের সমুদ্রের গর্জন ছাড়া সমস্ত কিছু নীরব ওস্থির। এখানকার গভীর অরণ্য খুবই মায়াবী ও রোমাঞ্চকর। প্রায় 300 প্রজাতির পাখি ,বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, ঝিনুক,বুনোশুয়োর,বনমুরগী প্রভৃতির বাস এখানে। মাঝে মাঝে দেখা মিলতে পারে ডলফিন এর। প্রায় সমস্ত ধরনের বিষধর ও বিষহীন সাপেদের বাসভূমি পিছাভারাম। এই অরণ্যে আছে প্রায় 25 প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ।জঙ্গলের বেশিরভাগ স্থানে গাছগুলো থেকে 3-9ফুট নিচে জন্মায়। পুরো জঙ্গল টাই সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকে এখানে জলপথে বিভ্রান্তকর ধাঁধা আছে যার জন্য আগে এটি স্মাগলার দের কেন্দ্রস্থল ছিল। এক কথায় বলা যেতে পারে এটি ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের থেকে আয়তনে অনেক গুন ছোট হলেও রোমাঞ্চে কম কিছু যায় না।
কিভাবে যাবেন-
তামিলনাড়ুর মন্দির শহর চিদাম্বারাম থেকে 30 মিনিট দূরে অবস্থিত পিছাভারাম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আপনি নিজস্ব গাড়ি ভাড়া করতে পারেন, চিদাম্বরম থেকে পিছাভারাম পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য 800 টাকা ভাড়া গুনতে হবে। এছাড়াও চিদাম্বরম প্রতি ঘন্টায় বাস আছে যার ভাড়া 10 টাকা প্রতি জন। চেন্নাই থেকে চিদাম্বরম ট্রেনে চারঘন্টা। চিদাম্বরমের দক্ষিণ-পূর্বে তিন ঘন্টা দূরে রয়েছে তিরুচিরাপল্লী বিমানবন্দর এবং উত্তরে রয়েছে পন্ডিচেরি বিমানবন্দর ।তবে বেশিরভাগ পর্যটক পন্ডিচেরি থেকে একদিনের সুবিধাজনক টুর করে থাকে।
পিছাভারাম জঙ্গলে প্রবেশের আগে জেটিঘাটে সারি দিয়ে ছোট-বড় বোট আপনি দেখতে পাবেন। আপনাদের যদি গ্রুপ বড় হয় তাহলে বড় বোট খুব আদর্শ এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করে আপনি পৌছে যাবেন সমুদ্রসৈকতে। তবে সরু সঙ্কীর্ণ খালের মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলে এবং গহীন অরণ্যের স্বাদ নিতে চাইলে আপনাকে নিতে হবে বিশেষ ছোট নৌকা। প্রতিটি বোট এর ধরন, যাত্রীসংখ্যা, দূরত্ব, আকর্ষণীয় জায়গা গুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে। এখানে খাওয়ার জায়গা খুবই সীমিত তাই আপনাকে আপনার খাবার বহন করতে হবে। এই অরণ্যের প্রকৃত রূপ ও সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনার জন্য ভালো সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। কারণ এই সময় পরিযায়ী পাখিদের কোলাহলে আপনার ভ্রমণ সার্থক হবে। গ্রীষ্মকাল দুর্যোগপূর্ণ ও গরম হওয়ায়, এই সময় এড়িয়ে চলাই ভালো।
Your email address will not be published. Required fields are marked *