করোনা যুদ্ধে তৎপর সরকার। এবার সাধারণের সুবিধার্থে মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিয়ে কালোবাজারি রুখতে রাজ্যে নয়া নির্দেশ জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে প্রকাশিত একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে বেশি জিনিস রাখতে পারবেন না দোকানিরা। বেঁধে দেওয়া হয়েছে সংখ্যাও।
মারবুর্গ:
মারবুর্গ ভাইারাস ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে কম মারাত্মক। জার্মানির একটি শহরের নামে এই ফিলোভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। উচ্চ মারণক্ষমতা অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ এ ভাইরাসে মারা যায়। মারবুর্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পঞ্চম বা সপ্তম দিনে সংক্রমিত ব্যক্তির প্রচণ্ড জ্বর এবং সেই সঙ্গে রক্তবমি, মলের সঙ্গে রক্ত, নাক, দাঁতের মাড়ি এবং যোনিপথে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ অসুস্থতার পরে পুরুষদের মধ্যে অর্কিটিস নামক অণ্ডকোষের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। তবে এই ভাইরাস খুব সহজে সংক্রমিত হয় না।
ডেঙ্গু:
ইন্ডিয়া তে প্রতিবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। এসিড মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়ে থাকে। ডেঙ্গুর আরেকটি নাম আছে, তা হলো ‘ট্রপিক্যাল ফ্লু’।
ডেঙ্গু ভাইরাস সাম্প্রতিককালে ইউরোপেও হানা দিয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৪১টি দেশে আনুমানিক ৩৯ কোটি ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তি মারাত্মক রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় প্রাণ হারায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
লাসা জ্বর :
১৯৬৯ সালে পশ্চিম আফিকার নাইজেরিয়ার লাগোসে লাসা নামক ভাইরাস জ্বর সর্বপ্রথম দেখা যায়। লাসা জ্বর সংক্রমিত চর্বি, ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত খাদ্য এবং ইঁদুরের স্পর্শ করা খাবার থেকে ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং চোখে ও নাকে সংক্রমন হতে পারে। প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির অবসাদ, জ্বর দেখা যায়। পরবর্তীকালে মাথার যন্ত্রনা, বমি, নিম্ন রক্তচাপ, নাক থেকে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি দেখা যায়। নাইজেরিয়ার প্রধান রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এপর্যন্ত লাসা জ্বরে আক্রান্ত ২২ শতাংশ রোগী মারা গেছেন। এই রোগ দেশটির ১৮টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্প্যানিশ FLU (১৯১৮- ১৯১৯)-
এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রধানত ইউরোপের শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে আধুনিক পরিসংখ্যান অনুসারে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন লোক সংক্রামিত হয়েছে এবং ৫০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে মারা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যারা মারা গিয়েছিল তাদের দ্বিগুণের সমতুল্য।
এইডস (১৯৮১)-
প্রথম ১৯৮১ সালে আবিষ্কার করা হয়েছিল এই রোগটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এইডস মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে মারা গেছে।এর মধ্যে ২০১৭ সালেই মারা গিয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোক। ২০০৪ সালে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৬.৯ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছিল।
সারাবিশ্বে রয়েছে এইচআইভি। এই ভাইরাসটি পোষক কোষে আট থেকে দশ বছর পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
যৌন সম্পর্কের ফলে অপরজনের শরীরে সহজেই প্রবেশ করবে এই রেট্রোভাইরাস। এইডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফোটানো সূচ থেকেও এই অসুখ সংক্রমিত হয়।
অসুখ আক্রান্ত প্রসূতির সন্তানের শরীরেও এইডস হতে পারে। সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ যৌন জীবন রয়েছে এমন পেশাদারদের ক্ষেত্রে এই অসুখের প্রভাব বেশি থাকে।
সোয়াইন flu (২০০৯)-
ভাইরাসটি শূকর থেকে মানবদেহে সংক্রামিত হয়। এরপর সেটি ধীরে ধীরে কৃষক এবং পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়,শূকরের সঙ্গে না মিশলেও এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোয় এই মহামারী দেখা দিয়েছে। সেখান থেকে এটি বিশ্বের সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮,৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটায়। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১০ সালে জরুরি অবস্থা জারি করতেও বাধ্য হয়।
সার্স :
সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) হল একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের উৎপত্তি চিনে। কটাস জাতীয় বিড়াল বা বাদুড় থেকে এই রোগের সংক্রমণ হয়। প্রথমক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ অস্বাভাবিক জ্বর সেইসঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, অল্পতেই হাপিয়ে ওঠা, পেট খারাপ প্রভৃতি লক্ষণ ও দেখা যায়। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে দু’বার এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আট হাজারের বেশি আক্রান্তের মধ্যে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
Covid-19:
২০০৩ সালে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স ভাইরাসকেও ছাড়িয়েছে করোনা ভাইরাস।এবার করোনা প্রকোপ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে।চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে আতঙ্ক ছাড়িয়েছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় তেইশ হাজার জন মানুষ মারা গেছে। করোনাভাইরাসের একটি প্রকরণ নভেল করোনা (Covid-19)। এই ভাইরাসের এখনও কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। ভারতে শুরু হয়েছে লকডাউন। এখন পর্যন্ত ভারতে ১৬ জন মানুষ মারা গেছে । চীনের সবগুলো প্রদেশ ছাড়াও অন্তত ১৮০টি দেশে এ পর্যন্ত শতাধিক করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও)।এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন সম্পর্কে বৈরী মনোভাব বাড়তে শুরু করেছে।
শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।এই ভাইরাসের এখনও কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *