প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে আরেকটি বিপদ। যে বিপদের আশঙ্কা ইতিপূর্বেও করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পঙ্গপালের হানায় বেলাইন হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। তার জন্য পাকিস্তান সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। এবার মরুদস্যু পঙ্গপালের চোখ ভারতের দিকে।
দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে একদল পঙ্গপাল সরাসরি ভারত উপদ্বীপের কৃষিজমিতে নেমে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারত যখন প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে তখন দেশটির দিকে ধেয়ে আসছে আরেকটি ভয়াবহ বিপদ। এ গ্রীষ্মেই ভারতের কৃষি জমিগুলোতে হামলে পড়তে পারে এই পঙ্গপাল। দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার, একটি হচ্ছে চলমান করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আর অন্যটি হচ্ছে পঙ্গপালকে প্রতিরোধ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। অর্থনীতির এই আশঙ্কাজনক অবস্থায় যদি দানাশস্য পঙ্গপালে খেয়ে যায়, তাহলে ভারতের মতো সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে দেখা দিতে পারে মহাসঙ্কট।
গত 21শে এপ্রিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আরব মরুভূমির পঙ্গপাল বাহিনী যারা এ বসন্তে পূর্ব আফ্রিকা, ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইরানে হানা দিয়েছে। আফ্রো-এশীয় অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও তারা বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতঅর্থে পঙ্গপাল শব্দটি হিংস্র না হলেও দল বেঁধে এরা যে নিমেষে সাবাড় করতে পারে কয়েক হাজার একর কৃষিজমি, তার প্রমাণ আগেই রয়েছে আফ্রিকা, ইয়েমেনে ও পাকিস্তানে। হর্ন অব আফ্রিকা থেকে যে একদল পঙ্গপাল ভারতে আসছিল, রাস্তায় তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও একদল মরুদস্যু। একদল কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান পেরিয়ে ভারতে ঢুকবে পাঞ্জাব-রাজস্থান হয়ে। অপর দল ভারত মহাসাগর টপকে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত ধ্বংস করে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে! যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী চলাফেরা করা এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করা, সে কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে ওরা বাংলাদেশেও হানা দিতে পারে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল। বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িঙ। স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ, খাবারের জন্য নিজ প্রজাতির বিপুল সংখ্যক সদস্যের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে। পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে।
সাধারণত একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বলছে এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল ঝাঁক এক সঙ্গে একদিনে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব। কেবল খাবারই খায় না তারা, একই সঙ্গে প্রজননের কাজটিও করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *