একদিকে দেশজুড়ে করোনা মহামারী, তার মধ্যেই একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একদিকে পশ্চিমবঙ্গের সুপার সাইক্লোন, অন্যদিকে অসমের বন্যা পরিস্থিতি। আবার উত্তর ও মধ্য ভারতের রাজ্যগুলিতে পঙ্গপালের উপদ্রব, সব মিলিয়ে ভারত যেনো এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। করোনা, ভূমিকম্প,আম্ফান,পঙ্গপালের পর শুরু হয়েছে দাবানলের তান্ডব। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নাভিশ্বাস উঠছে, চারিদিক থেকে নানারকম সমস্যা গ্রাস করছে ভারতবাসীকে।
আমাজন, অষ্ট্রেলিয়ার পর এবার জ্বলতে শুরু করেছে আমাদের দেশ ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ ৭১ হেক্টর সবুজ বনভূমি। গত 23 শে মে থেকে টানা 6 দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। দাউ দাউ করে জ্বলছে ভারতের উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ বনভূমি।দাবানলের জেরে জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।বন্যপ্রণীদের জীবনও বিপন্ন।
বিপুল সংখ্যক গাছ এবং বন্যপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের সবথেকে বেশি প্রজাতির পাখি এই বনভূমিতেই দেখা যায়। পাশাপাশি অসংখ্য বিরল প্রজাতির জীবজন্তু এবং পাখির বিচরণ ক্ষেত্র উত্তরাখণ্ডের এই জঙ্গল। এই জঙ্গল থেকে সারা বছর প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। রাজ্যের সমস্ত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এই বনকে কেন্দ্র করেই। ফলে এইভাবে একের পর এক দাবানলের কারণে পরিবেশের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের। গত 6 দিন ধরে চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে সেখানে উদ্বেগ বাড়ছে।
রিপোর্ট বলছে, গত ১১ দিনে মোট ৩২টি দাবানলের গ্রাসে হিমাচল প্রদেশের এই সুন্দর এলাকা। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে যে ইতিমধ্যেই প্রায় ১.৩২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে যে কুমায়ুন অঞ্চলের বনরাজির সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন অঞ্চলে ২১ টি ঘন জঙ্গল রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টিকে ইতিমধ্যেই গ্রাস করেছে ভয়ঙ্কর দাবানল। কুমায়ুন ছাড়া দাবানলের খবর পাওয়া গিয়েছে নৈনিতাল, আলমোড়া, দেরাদুন, পৌরি, গাড়ওয়াল তেহরি থেকেও।
অন্যদিকে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, নৈনিতাল ও আলমোরা ছাড়া যেসব এলাকায় আগুন ছড়িয়েছে, তার বেশিরভাগই মানুষের দ্বারাই ঘটেছে। দেরাদুনের ইকোলজি ডেভেলপমেন্ট ও রিসার্চ সেন্টারের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর বিশাল সিং-এর কথায়, পশ্চিম হিমালয় এলাকাজুড়ে যা দাবানল ছড়িয়েছে, তাতে অধিকাংশই মানুষের তৈরি করা। গ্রামবাসীরা চাষের জম্য করার জন্য হামেশাই আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু তাঁরাই ননস বনকর্মীরাও অজান্তেই নানাকারণে আগুন লাগান। তাতে পাহাড়ের গায়ে বিশালাকৃতি পাইনগাছের অত্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতেই পাইনগাছের জঙ্গলে খুব তাড়াতাড়ি আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গলের ঘাস পুড়ে যাওয়ায় নতুনভাবে গাছ তৈরি হতেও বেশি সময় লাগে। তাঁর কথায়, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, মারাত্মক দাবানলের শিকার হলে তা অনিয়ন্ত্রিত। ফলে আগুন হাতের বাইরে চলে গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।
দাবানলের কারণে উত্তরাখণ্ডের তাপমাত্রা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগুন যত বাড়ছে তাপমাত্রাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবজগৎ এর ধ্বংসলীলা। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর। চূড়ান্ত প্রাকৃতিক রোষে কার্যত বিপর্যস্ত গোটা দেশের জনজীবন। সব মিলিয়ে রীতিমত ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। সব মিলিয়ে এই ২০২০ বছরটি ধ্বংসের বছর বলে পরিগণিত হচ্ছে ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *