কয়েক দশক আগেও, হিন্দু পরিবারগুলোতে প্রবীণরা সন্ধ্যার নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। শাস্ত্র অনুযায়ী তারা সমস্ত সদস্যদের ঘরের মন্দিরের সামনে একত্র করতেন এবং সন্ধ্যা আরতি ও শ্লোক-মন্ত্র উচ্চারণ করতেন। কিন্তু দিনদিন এই আচারগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। শ্লোকের শব্দ এখন টিভি সিরিয়ালের আড়ালে চাপা পড়েছে। মফস্বল থেকে শুরু করে ব্যস্ত শহর সব জায়গাতেই একই অবস্থা দেখা যায়। বিভিন্ন খাওয়ার দোকান, ফাস্ট ফুড, আইসক্রিমের দোকানে, সিনেমা হলে সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
আমরাও খুব খুশি সমাজের এত উন্নতি দেখে, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একবারও কি আমরা ভাল করে খেয়াল করছি প্রদীপের তলার অন্ধকার? সঠিক নিয়মে সন্ধ্যা পূজা না করার জন্য রোগ, ব্যাধি, হতাশা, ব্যর্থতা আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এত এগিয়েও কোথায় যেন আমরা আবার পিছিয়ে পড়ছি!
শাস্ত্রে বলা আছে, অশুভ শক্তি/নেতিবাচক শক্তি সবচেয়ে বেশি প্রকট হয় সন্ধাবেলায়। তাই নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে বারন করা হয়েছে:
• খাওয়া, ঘুমানো, পান করা
• সহবাস করা
• কোন শুভ কাজের আরম্ভ
• দূরযাত্রা
• কান্না কাটি বা দুশ্চিন্তা করা
• টাকা পয়সার লেন দেন
• কাওকে সাদা বস্তু প্রদান করা, চুল/নখ কাটা
• শপথ নেয়া, ঝগড়া করা, গালি দেয়া, মিথ্যা বলা, অশ্লীল কথা উচ্চারণ, কাওকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা
এছাড়াও বেশ কিছু কাজ শাস্ত্রে মানা করা আছে। যেমন:
• ঘর ঝাড়ু/ মোছা - সন্ধ্যায় রজ ও তম শক্তি পরিবেশে প্রবল থাকে। এই সব কাজের মাধ্যমে রজ-তম শক্তি আমাদের শরীরকে আকর্ষণ করে শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। তাই সন্ধ্যার পূর্বেই ঘর পরিষ্কার করা উচিত।
• নদী তীরে বসা (গঙ্গা ব্যতীত)
• মনে রাখতে হয় এমন কাজ করা (পড়া লেখা)
• বেদ পাঠ - সন্ধ্যা হল রাত্রির আরম্ভ কাল (প্রদোষ কাল)। বেদ অনুসারে প্রদোষ কালে বেদপাঠ ও বেদ বহন বারণ। তবে শুধু সন্ধ্যাদোষ নিবারণের নির্বাচিত মন্ত্র উচ্চারণ করা যাবে ।
• গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বারন:
- দরজার সামনে বসা
- সন্ধ্যায় গৃহপালিত পশুর ঘরে ফিরতে দেখা।
হয়তো সকল নিয়মই জড়জাগতিক যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য কি না, তা ভাবতে পারেন। কিন্তু স্মরণ রাখা উচিত যে, আমাদের জ্ঞানের সীমা অনেক সীমিত। আমাদের পূর্বতন বিদগ্ধ পণ্ডিত পূর্বপুরুষগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলোকেই আমাদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আর তা আমাদের কল্যাণের জন্যই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *