ডিম হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর স্ত্রী জাতির পাড়া একটি গোলাকার বা ডিম্বাকার জিনিস যা মেমব্রেনের স্তর দ্বারা ঘিরে থাকা ডিম্বক এবং বহিরাবরণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। বহিরাবরণের মূল কাজ হলো এর অভ্যন্তরে বাড়তে থাকা ভ্রূণকে এবং ভ্রূণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকে রক্ষা করা। মুরগী ও কচ্ছপের ডিমসহ বেশীরভাগ মুখরোচক ডিমই শক্ত বহিরাবরণ বা ডিমের খোসা, অ্যালবুমেন (সাদা অংশ),ডিমের কুসুম এবং কিছু মেমব্রেন দিয়ে তৈরী। ডিমের সকল অংশই খাদ্যপোযোগী, যদিও খোসা সাধারণত বাদ দেয়া হয়। পুষ্টিগতভাবে ডিম প্রোটিন ও কোলিনের উৎকৃষ্ট উৎস।
ডিমে কি কি উপাদান থাকে ?
প্রোটিন
ভিটামিন ডি
ভিটামিন এ
ভিটামিন বি2
ভিটামিন বি12
ফোলেট
আয়োডিন
দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া যাবে ?
তেমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই । সুষম খাদ্য হিসেবে ডিমে বেশি লবণ , তেল ও বাটার না দেয়া ভালো । এতে ডিমের ফ্যাট আরো বেড়ে যাবে । সবজি যেহেতু ফ্যাট হজমে বাধা দেয় , তাই ডিমের সঙ্গে সালাদ বা সবজি খাওয়া ভালো।
ডিম কিভাবে রান্না করলে তা স্বাস্থ্যকর হবে ?
হালকা আঁচে ডিম রান্না করুন । যদি পুরো ক্যালরী টা পেতে চান তবে পোচ বা সেদ্ধ খান । ডিমের সাথেই সবজি খান । ভেজে খেলে heat stable oil যেমন, EV olive oil , Sunflower oil দিয়ে ভাজুন । যথা সম্ভব পুষ্টিকর ডিম কিনুন , দেশীয় ,অর্গানিক ইত্যাদি । বেশিক্ষণ রান্না হলে এর ক্যালরি কমে যাবে।
কিভাবে ডিম সংরক্ষণ করবেন ?
ঠান্ডা শীতল ও শুষ্ক নিরাপদস্থানে রাখুন । ঘরের ফ্রিজ ই এটার উপজুক্ত জায়গা । তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে রাখলে ভালো ।
ডিম হতে ময়লা বা জীবাণু যাতে অন্য খাদ্যে বা পাত্রে না যায় খেয়াল রাখুন ।সে জন্য "egg tray" ভালো । ডিমে ময়লা থাকলে ভালোভাবে সেদ্ধ করুন , কাচা বা অল্প সেদ্ধ, বা পোচ ফুড পয়জনিং এর অন্যতম কারণ ।
কাস্টার্ড বা কেক জাতিয় যেসব খাবারে ডিম থাকে, দীর্ঘক্ষণ বাইরে ফেলে রাখবেন না । না খেলে দ্রুত ফ্রিজে রাখুন ।
হৃদরোগ , কোলেস্টেরল ও ডিমের সংশ্লিষ্টতা:
কোলেস্টেরল শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । কোষ আবরণীর জন্য এটা গাঠনিক অনু এবং টেস্টোস্টেরন ,ইস্ট্রোজেন ও কর্টিসল এর মত হরমোন উৎপাদনে কাজে লাগে । আমাদের খাদ্যে কোলেস্টেরল বেশি হলে লিভার নিজ থেকে এর উৎপাদন কমিয়ে দেয় ।
মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল হার্টের জন্য ক্ষতিকর , হার্ট ফাউন্ডেশন এর মতে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দিনে ৩০০মিলিগ্রাম ও হৃদরোগীদের জন্য ২০০মিলিগ্রাম বৈধ । তবে কোলেস্টেরল রোগীরা সপ্তাহে ৩ টি খেতে পারে ।
দুটো সম্পূর্ণ ডিমে ৪২২মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে । অন্য কোন চর্বি না খেলে দিনে একটি ডিম হৃদরোগীর জন্য বৈধ, সেটা না চাইলে এর কুসুম বাদ দিয়ে খেলেই চলবে ।
কাঁচা ডিম ও ফুড পয়জনিং:
যদিও আমরা ছোটবেলায় অনেক কাচা ডিম খেয়েছি , কিন্তু কেনা ডিম কাচা , অল্প ভাজা বা অল্প সেদ্ধ খাওয়া যাবে না । শিশু ,গর্ভবতী, বৃদ্ধরা কাচা ডিম হজম করতে পারেনা ।
সালমানেলা নামক একপ্রকার জীবাণু কাঁচা ডিমে পাওয়া যায় , যা ফুড পয়জনিং , টাইফয়েড এসবের জন্য দায়ী । পাস্তুরিত ডিম বলে পশ্চিমে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া মুক্ত ডিম পাওয়া যায় । এটা গোটা, তরল, শুকনো বা ফ্রোজেন ও হতে পারে । শিশু বা বৃদ্ধদের এই ডিম হালকা পোচ করে খাওয়ানো যায় ।
যে সকল খাদ্যে কাঁচা ডিম থাকে:
ঘরে তৈরি মেয়নেজ
সালাদ ড্রেসিং
আইস ক্রিম
চুলের জেল
উপরোক্ত খাবারগুলো ঘরে বানালে পাস্তুরিত ডিম নিরাপদ । বানিজ্যিক ভাবে উপরোক্ত খাবারগুলো তৈরির আগে ফুড সেফটি দপ্তর থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী ডিমকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করে নিতে হয় ।
ডিম কতদিন ঘরে রাখা নিরাপদ :
সর্বোচ্চ ৭ দিন । এর আগে যদি যথেস্ট ডিম থেকে যায় তবে কেক বা কারী বানিয়ে খেয়ে ফেলুন ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *