বল্লভভাই প্যাটেল (৩১ অক্টোবর ১৮৭৫ – ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০) একজন ভারতীয় পণ্ডিত ও জাতীয়তাবাদী নেতা। যিনি সর্দার প্যাটেল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সিনিয়র নেতা এবং ভারতের প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা, যিনি স্বাধীনতার সংগ্রামের সংগ্রামে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং একটি ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন জাতির মধ্যে তার একীকরণ পরিচালনা করেছিলেন।
গুজরাটের কুর্মী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্যাটেল। তার পিতা-মাতা ছিলেন জাভেরভাই ও লাডবাই। তার বাবা ঝাঁসির রানীর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন।
গুজরাটি মিডিয়াম স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পরবর্তীকালে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে স্থানান্তরিত হন।১৮৯৭ সালে তিনি উচ্চ বিদ্যালয় পাস করেন এবং আইন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।তিনি তুলনায় বেশি বয়েসে ম্যাট্রিক পাশ করেন (২২ বছর)। তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে ১৯১০ সালে ইংল্যান্ডে যান। তিনি ১৯৩৩ সালে ইনস অফ কোর্ট থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ।ভারতে ফিরে এসে তিনি গুজরাটের গোধরায় তাঁর আইন অনুশীলন শুরু করেন। আইনি দক্ষতার জন্য তাকে ব্রিটিশ সরকার অনেক লাভজনক পদে প্রস্তাব দিয়েছিল তবে তিনি সব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের আইনের কট্টর বিরোধী ছিলেন । তাই ব্রিটিশদের পক্ষে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
মহাত্মা গান্ধীর বরদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রধান সেনানী ছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল । সত্যাগ্রহ আন্দোলন করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী যখন নাগপুর জেলে বন্দি থাকেন সেই সময় এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনটি সারা ভারত জুড়ে পরিচালনা করেন বল্লভ ভাই প্যাটেল ,মহাত্মা গান্ধীর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন এবং ইংরেজ ভারত আন্দোলনের মুখ্য বাস্তুকার ছিলেন সর্দার প্যাটেল ,ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পর্তুগিজ দের হাত থেকে গোয়া এবং নিজাম দের হাত থেকে হায়দ্রাবাদ উদ্ধার করে ভারত সরকারের সাথে যুক্ত করেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি গান্ধীর প্রতি তার অটল সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন যখন বেশ কয়েকজন সমসাময়িক নেতা পরবর্তীকালের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে হৃদয় অনুভূত বক্তৃতায় এই আন্দোলনের এজেন্ডা প্রচারে সারাদেশে ভ্রমণ চালিয়ে যান। ১৯৪২ সালে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের সাথে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি আহমেদনগর দুর্গে বন্দী ছিলেন।
সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নীতি ও আদর্শ এখনও অনুকরণীয়। তিনি ছিলেন একজন মহান রাজনীতিবিদ। তার ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ও দেশপ্রেম আজও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী হন। তার সম্মাননায় ভারতের গুজরাতে তার জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় "স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বা ঐক্যের মূর্তি", যা গত ৩১শে অক্টোবর ২০১৮ সালে উদ্ভোধন করা হয়। এইছাড়াও তার নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। ২০১৪ সালে তার জন্মদিবস ৩১ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *