
2008 সালের নভেম্বর মাসের অভিশপ্ত সেই রাত। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি হামলায় রক্তে ভিজেছিল মুম্বাই। 26 নভেম্বর থেকে 29 নভেম্বর জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন 164 জন, আহত হন অন্তত 308 জন। ফলে এখনো সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে নিহতের পরিবার ও আহতরা।
কিভাবে ঘটেছিল হামলা, কোন পথে এসেছিল সন্ত্রাসবাদীরা-
2008 সালের 26 শে নভেম্বর মুম্বাইয়ের জঙ্গি হামলা 26/11 নামে পরিচিত। পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে 10 জন সন্ত্রাসবাদী এবং প্রায় 38 ঘন্টা সমুদ্রের বোট নিয়ে ঘরে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর চোখে ধুলো দিতে পারে। সাগরের মধ্যে অনেক দূর পর্যন্ত তারা একই জাহাজে ছিল, তারপর তারা সাগরের মাঝে ভারতীয় মাছ ধরার (ফিশিং বোট) নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বাই উপকূলে এসে ওই জেলেদের হত্যা করে।
দক্ষিণ মুম্বাইয়ের দশটির বেশি জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রত্যেকের কাছে এ কে ফরটিসেভেন অ্যাসল্ট রাইফেল, একটি অটোমেটিক লোডিং রিভলভার, চারটি করে হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি করে ক্রেডিট কার্ড এবং খাবার জন্য শুকনো ফল ছিল। ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস (CSRT), ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, তাজমহল প্যালেস, লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হসপিটাল, নরিম্যান হাউস, মেট্রো অ্যাডল্যাবস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনে একটি গলি। এমনকি মুম্বাই বন্দরের অদূরে মাজগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যে তারা বিস্ফোরণ ঘটায়।
ধারাবাহিক গুলি চালানো ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। জঙ্গিরা আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ ক'রে পরিকল্পনা করেই যে এই হামলা চালিয়েছিল, তা পরে স্বীকার করে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। 2008 সালের 26 নভেম্বর থেকে 29 শে নভেম্বর পর্যন্ত এই হামলা চলে। সারা বিশ্বে এই ঘটনার তীব্রভাবে নিন্দিত হয়।
অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে 28 শে নভেম্বর 2008, সকালের মধ্যেই মুম্বাই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া বাকি আক্রান্ত জায়গাগুলি সুরক্ষিত করে ফেলে। 29 নভেম্বর "অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো"র সাহায্যে ভারতের জাতীয় সুরক্ষা বাহিনী (NSG) তাজ হোটেলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের হত্যা ক'রে শহরকে জঙ্গিমুক্ত করে।
জীবিত অবস্থায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসভ জেরার মুখে স্বীকার করে যে, তারা পাকিস্তানে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। দীর্ঘ বিচারের পর 2010 সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ আদালত ধৃত কাসভকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
প্রসঙ্গত হামলার দিনে 26 শে নভেম্বর, ভারত সফরে রাজধানী দিল্লিতে এসেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি। পরেরদিন চণ্ডীগড়ে মধ্যাহ্নভোজে ভারতের বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার সৌজন্য বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। প্রণব বাবু কুরেশিকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমান এসে তাকে নিয়ে যায়।
মুম্বাই হামলার জেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে সরিয়ে চিদাম্বরমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মুম্বাই হামলার জেরে দেশজুড়ে নিন্দিত হয় পাকিস্তান। চাপের মুখে পড়ে 2009 সালের 7 জানুয়ারি, তথ্যমন্ত্রী (পাকিস্তান) শেরি রহমান সরকারিভাবে মেনে নেন আজমল কাসভ পাকিস্তানের নাগরিক। 2009 সালের 12 ই ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী রহমান মালিক স্বীকার করেন "পাকিস্তানে বসেই হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা"।
প্রসঙ্গত কাসভকে ফাঁসি দেওয়া হয় একুশে নভেম্বর 2012, যখন তার বয়স হয়েছিল 25 বছর।
Your email address will not be published. Required fields are marked *