অনেক দেশ অনেক শহর ঘুরলাম কিন্তু, দিনের শেষে ভালোবাসার টানে ফিরে আসি আমার এই মহানগরীতে। এই কলকাতা শহরটাকে সবাই "City of Joy" বলে , এটা যেমন ঠিক তেমনই আমার কাছে এই শহরটা একটা রহস্যের শহর।
অনেক রহস্য অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে আমার এই শহর। শুধু এই নয় নতুনের সাথে পুরোনোর কি ভাবে বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে সেটা হয়তো এই শহরকে দেখলেই বোঝা যাই। আধুনিক SUV আর Sedan এর সাথে কিভাবে পাল্লা দিতে হয়, সেটা শেখায় আমার এই শহর। সত্যিই তাই, এরা হলো কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি।এই হলুদ ট্যাক্সির নানান গল্প আর ইতিহাস, প্রতিটি কলকাতাবাসী ভাগ করে নিতে জানে। ইতিহাসের পাতাটা উল্টালে দেখা যায় সেই ফরাসিদের আমল থেকে এখনো পর্যন্ত এই হলুদ ট্যাক্সি বিশ্বস্ত প্রেমিকের মতো শহরকে আঁকড়ে পরে আছে।
খুব সম্ভবত ১৯০৯ দশকের দিকে ট্যাক্সি পরিচিত হয় এই শহরের সাথে। চৌরঙ্গী থেকে প্রথম পথ চলা শুরু, সেই সময় বেশির ভাগ ট্যাক্সিই ছিল লাল রঙের তারপরে সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিতে দিতে, চলে এলো কালো ও হলুদ ট্যাক্সি। শুরু হলো শহর জুড়ে তাদের দুরন্ত গতি। অনেক বাঙালি এবং অবাঙালি নিযুক্ত হলো এই পেশার সাথে। তেমনই এক অবাঙালি ড্রাইভার মাধব পাসোয়ান এর সাথে পরিচয়, তাদের পরিবার বহূদশক ধরে এই পেশায় যুক্ত । পাসোয়ানের অনেক প্রজন্মই শাসন করেছিল এই রাস্তা গুলোতে। এই ভাবেই চৌরঙ্গী লেনের প্রধান চরিত্র আর ভদ্রলোকদের সাথে, বেশ মানানসই হয়েছিল এই হলুদ ট্যাক্সি। দিনের পর দিন হিন্দুস্থান মোটর লিমিটেড, হয়ে উঠেছিল কলকাতা রাস্তার এক অসাংবাদিত রাজা।
কলকাতার ইলিশ , ট্রাম, গঙ্গা , হাওড়া ব্রিজের পাশাপাশি হলুদ ট্যাক্সিও কলকাতার সাথে একান্ত ভাবে জড়িয়ে পড়লো। কালের অমোঘ নিয়মে একদিন সকলকেই সরে যেতে হয় , জায়গা পায় নতুনরা ঠিক এই ভাবেই প্রতিযোগিতার বাজারে ঘটে গেলো বেশ কিছু পরিবর্তন। Ola - uber এর রমরমার মাঝেই হারিয়ে যেতে বসলো এককালের এই শহরের সেনাপতি। বেশ কয়েক বছর আগেই নিজেদের ব্যবসা গুটিয়েছে হিন্দুস্থান মোটর কোম্পানি। এই ভাবেই হয়তো মুছে যায় সবকিছু ! জায়গা করে নেই অন্যকেউ, কিন্তু শহরের আনাচে কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা হলুদ ট্যাক্সিই কলকাতার নস্টালজিয়া।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Superb