মহাভারত নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক রহস্য। অসংখ্য চরিত্র, অবিশ্বাস্য সব কাহিনী, তাদের অনেক ঘটনা, উক্তি এই মহাভারত গ্রন্থ কে একটি রহস্যময়তা দান করেছে। অসংখ্য পন্ডিত, গবেষক প্রাচীনকাল থেকে এখনো পর্যন্ত চেষ্টা করে চলেছে মহাভারতের রহস্য ভেদ করতে কিন্তু বারবারই মহাভারতের বিভিন্ন রহস্য আমাদের সামনে উঠে আসে। তেমনি এক রহস্য মহাভারতের 18 সংখ্যাটি কতবার ব্যবহার হয়েছে আর কেনই আঠারো সংখ্যাটা বারবার মহাভারতে দেখা যায়।
আপনাদের মধ্যে যারা মহাভারত সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেবেন, “কেন? এর উত্তর তো খুব সহজ। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৮ দিন ধরে চলেছিল। সুতরাং ১৮ সংখ্যাটা মহাভারতে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে।”আপনাদের মধ্যে যারা মহাভারত সম্পর্কে আরো একটু তথ্য রাখেন, তাঁরা বলবেন, “সমগ্র মহাভারত ১৮টি পর্বে বিভক্ত।” একদম ঠিক উত্তর। “আদি পর্ব” থেকে শুরু করে “স্বর্গারোহণ পর্ব” অবধি মহাভারতে সর্বমোট ১৮টি পর্ব আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমগ্র মহাভারতে, ১৮ সংখ্যাটি কি মাত্র এই দুইবারই ব্যবহৃত হয়েছে ? মহাভারতে আরো কয়েকবার এই 18 সংখ্যাতত্ত্ব ব্যবহার হয়েছে দেখে নেওয়া যাক-
মহাভারতে “আদি পর্ব” থেকে “স্বর্গারোহণ পর্ব”পর্যন্ত সর্বমোট ১৮টি পর্ব আছে। অর্থাৎ মহাভারতের সমগ্র গল্পটি ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ মোট ৭+১১=১৮ অক্ষৌহিণী সেনার মধ্যে ঘটেছিল। পান্ডবদের সেনা ৭ অক্ষৌহিণী এবং কৌরব ১১ অক্ষৌহিণী।
যুদ্ধের প্রথম দিন স্নায়ু চাপে ভেঙ্গে পড়া অর্জুনকে সাহস দিতে শ্রীকৃষ্ণ “গীতা”র উপদেশ শোনান। গীতায় সর্বমোট ১৮টি অধ্যায় আছে।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলে মোট ১৮ দিন ধরে।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের সংখ্যা মোট ১৮ ধরণের।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পান্ডবদের সেনাদের ৯টি পদ ছিল এবং কৌরব পক্ষের সেনাদের ৯টি পদ ছিল, যোগ করলে দাঁড়ায় ১৮।
“স্ত্রী” পর্বে বর্ণিত... যুদ্ধের পরে জীবিত সেনার সংখ্যা যুধিষ্ঠিরের মতে ২,৪০,১৬৫...যোগ করলে পুনরায় ১৮।
মহাভারতে ১৮ লক্ষ শব্দ রয়েছে।
১৮ সংখ্যাটির মাঝে একটি ভ্যালুলেস শূন্য বসালে... হবে ১০৮। এই ১০৮ সংখ্যাটি হিন্দুদের পবিত্র সংখ্যা বা holy number। কেন? ১০৭ নয়, ১০৯ নয়...১০৮ কেন? দর্শনশাস্ত্রে এর কিছু ব্যাখ্যা আছে। ১০৮ সংখ্যাটি ইংরাজীতে লিখলে হয় 108। ভারতীয় দর্শনে 1 সংখ্যাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ...আমরা বলি ঈশ্বর এক ও অভিন্ন। 1 এর পরে আসে 0...আমরা বলি ঈশ্বর নিরাকার, তাঁর কোনো রূপ নেই। শেষে আসে 8...যাকে ডান বা বাম দিকে 90 ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিলে হয় অসীম বা ইনফিনিটির চিহ্ন...ঈশ্বর অসীম, আদিগন্ত বিস্তৃত, যার শুরু বা শেষ কিছুই নেই।
মহাভারতের কবি কেন এতোবার ১৮ সংখ্যাটির পুনরাবৃত্তি করলেন? কি উদ্দেশ্য ছিলো তাঁর ? কি বলতে চেয়েছিলেন তিনি? এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। শুধু মহাভারত নয় বেদব্যাস রচিত সব গ্রন্থেই ১৮ সংখ্যার প্রাধান্য রয়েছে।এর কারন ১৮ সংখ্যা হচ্ছে যোগ সংখ্যা।মানুষের জীবনে "যোগ" যদি না থাকে তাহলে মানুষ ঈশ্বর লাভ করতে সচেষ্ট হতে পারেনা। যদিও এখনো পর্যন্ত এই 18 সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের কোন মিল পাওয়া যায়নি ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *