শাঁখামুঠি বা শঙ্খিনী বা ডোরা শঙ্খিনী (ইংরেজি: Banded Krait, বৈজ্ঞানিক নাম: Bungarus fasciatus) হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভুক্ত এক প্রকার বিষধর সাপ। এটি Bungarus গণের আওতাভুক্ত। এই সাপের বিস্তৃতি দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়।
এরা ভারত,বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, লাওস, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই অংশে পাওয়া যায়।
এই সাপ ফণাহীন ও এদের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো আর হলুদ ডোরাকাটা থাকে, এছাড়াও এদের দেহটি পিঠের শিরদাঁড়া থেকে ত্রিকোণাকার। এদের বিষদাঁতগুলো কেউটের মতো সামনের দিকেই থাকে
এটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হতে পারে ২.১ মি (৬ ফু ১১ ইঞ্চি)। সাপটি বেশ বড় হলেও সাপটির লেজের অংশটি ছোট ও ভোতা। সদ্য প্রস্ফুটিত অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৪০ সেমি উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সাপটি সাধারনত মানুষ দেখলে পালানোর চেষ্টা করে। মাথা ঝোপ বা মাটির মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখন ভোতা লেজটিকে অনেকে মাথা ভেবে ভুল করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা আছে যে শাঁখামুটি দুমুখো সাপ। শাঁখামুঠির দুটো মুখ নেই , সাধারণত কোন প্রাণীর দুই মাথা থাকতে পারে না। কিছু প্রাণী জিনগত কারণে জন্মের সময় দুই মাথা নিয়ে জন্মালেও তারা বেশিদিন বাঁচে না।
এই সাপটি শান্ত ও লাজুক স্বভাবের। সাধারণত মানুষ এড়িয়ে চলে। এমনকি বিরক্ত করলে শরীর পেঁচিয়ে মাথা শরীরের নিচে লুকিয়ে রাখে। বলা যায় মানুষের জন্য মোটেও হুমকিস্বরুপ নয়। তবে শিকারে বেশ দ্রুত।
শাঁখামুটি থাকলে কালাচ ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। কারণ কালাচ এদের প্রিয় খাবার, তাছাড়াও অন্য সাপেদের শাখামুটি শিকার করে। অর্থাৎ শাঁখামুটি থাকলে সেখানে অন্যান্য বিষধর সাপ মোটেই আসবেনা। সুতরাং বলা যায় এরা একদিক থেকে মানুষের উপকার করে থাকে।
শাঁখামুঠির বিষ মারাত্মক। এদের মধ্যে বাঙ্গারোটক্সিন বলে কতগুলি সক্রিয় পদার্থ আছে। স্নায়ুতন্ত্রে এই বিষক্রিয়া দ্রুত মৃত্য ঘটায়। তাই এরা নিউরোটক্সিনেদের মধ্য গণ্য। আলফা বাঙ্গারোটক্সিন নিকোটিনিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টারের উপর কাজ করে।
শাঁখামুটি তীব্র নিউরোটক্সিক হওয়া সত্বেও এদের কামড়ে মৃত্যুর রেকর্ড সারা ভারতবর্ষে একটিও পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও ফড়িং, ব্যাং, টিকটিকি এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। এরা হালকা ঝোপঝাড়, বাগান, কলাবাগান, বাড়ির আশেপাশে থাকতে ভালোবাসে।
স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৪ থেকে ১৪টি ডিম দেয় এবং ডিমের পরিস্ফুটনকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ডিমের পরিস্ফুটনের জন্য ৬১ দিন সময় লাগে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *