২০১৫ সালে প্রথম ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কেনায় আগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষেই দুই দেশের মধ্যে ৩৯ হাজার কোটির টাকার ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফের মোট ৫টি ইউনিট ভারতকে হস্তান্তর করবে। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে চলা ভারত চীন সীমান্তে গালওয়ান উপত্যকাকে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভারত সরকার চাইছে এই ক্ষেপণাস্ত্র ২০২০ মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে। সেই কারণে গত তেইশে জুন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিকে ত্বরান্বিত করে এবং চীনের তরফে বারবার রাশিয়াকে বাধা দেয়া সত্ত্বেও, রাশিয়ার তরফে বলা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই চুক্তির সকল ইউনিট ভারতকে হস্তান্তর করবে। বিমানবাহিনীর শক্তি বাড়াতে রাশিয়ার থেকে ১২টি অত্যাধুনিক সুখোই-30 ফাইটার জেট ও ২১টি নতুন ভার্সনের মিগ-২৯ কেনার পরিকল্পনা করেছে ভারত। যার জন্য বরাদ্দ হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
কী এমন ক্ষমতা রয়েছে এস-৪০০-এর যার জন্য প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করেছে ভারত?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম হল এস-ফোর হান্ড্রেড। এর এক একটি ইউনিটে থাকে ভূমি থেকে আকাশে অর্থাৎ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, দূর-পাল্লার সার্ভিল্যান্স রাডার, অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট রাডার, কম্যান্ড ভেহিকল এবং ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টর-লঞ্চার ভেহিকল বা টেল ভেহিকল (ট্রাকের মতো দেখতে যে গাড়ি ক্ষেপণাস্ত্রকে বহন করে নিয়ে যেতে পারে এবং ছুড়তে পারে)।
কী কারণে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এত জনপ্রিয়? আর কেনই বা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি অগ্রাহ্য করে, একের পর এক দেশ এস ফোর হান্ড্রেড কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে যাচ্ছে? এমন সব প্রশ্নের জবাবে অস্ত্র বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি, ৬০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুও ট্র্যাক করতে সক্ষম। আর ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রটি। একসঙ্গে ১০০ থেকে ৩০০টি লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। আর এর স্বয়ংক্রিয় মিসাইল লঞ্চার এক সঙ্গে ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ যে কোনও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, স্টিল্থ ফাইটার (গোপনে হামলা চালাতে সক্ষম যুদ্ধবিমান), ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলের হামলাও রুখে দিতে সক্ষম। আকাশপথে এই ধরনের কোনও হামলা চালানোর চেষ্টা হলে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ইউনিট ক্ষেপণাস্ত্র হেনে আকাশেই ধ্বংস করে দিতে পারে প্রতিপক্ষের বিমান, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রকে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মোট ৫টি ইউনিট এর তিনটি ইউনিট মোতায়েন করা হবে পশ্চিম সীমান্তে। দু’টি ইউনিট পূর্ব তথা উত্তর-পূর্ব সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে পরমাণু হামলার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই আকাশসীমা সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *