চাঁদের মাটিতে মানুষের পদার্পণ করিয়ে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছিল আমেরিকা। পরবর্তীকালে আমেরিকার এই সাফল্য নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন আর বিতর্ক। তবে সেই বিতর্কে না গিয়ে বলা যায় ভারতের চন্দ্রাভিযান 2 পুরোপুরি সফল না হলেও, ৯৮% সফলতা নিয়ে ল্যান্ডার বিক্রমকে পাঠিয়ে, মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতও যে কারোর থেকে কোন অংশে কম নয় তা দেখিয়ে দিয়েছে।
“ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি বা তার আগেই মহাকাশে এক ভারতীয় তিরঙ্গা ওড়াবেন। ২০২২ সালে আমরা এই কাজ করে দেখাবো। এই কাজ করতে পারলে ভারত চতুর্থ দেশ হিসাবে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে। আমার এই ঘোষনা করার সময় গর্ব হচ্ছে যে ভারত খুব শিঘ্রই মহাকাশে মানুষ পাঠাতে চলেছে। দেশের বিজ্ঞানীরা এই স্বপ্নকে সফল করবেন।” দুবছর আগে,2018 সালের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে এমনটাই ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আর সেই প্রস্তুতি যে সত্যিই চলছে ,বছরের প্রথম দিনেই ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা “ইসরোর” প্রধান কে শিবন ২০২২ সালেই মনুষ্যবাহী মহাকাশযান পাঠানোর উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। এর অফিসিয়াল নাম দেয়া হয়েছে “মিশন গগনযান”। এছাড়াও আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালেই চন্দ্রযান বা চন্দ্রায়ন 3 পাঠানোর কথা তো আছেই।
শিবন জানান, গগনযান আর চন্দ্রযান-৩-এর কাজ একসঙ্গেই চলবে। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে প্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা, আর সময় লাগতে পারে ১৪ থেকে ১৫ মাস। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প দু'টি এই বছর ছাড়িয়ে চলে যাবে ২০২১ সালের গোড়ায়।মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রকল্প ইসরো-র এতদিনের অন্যান্য সফল প্রকল্পের থেকে অনেকটাই পৃথক। চাঁদে বা মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর তুলনাতেও এই প্রকল্প অনেক বেশি কঠিন।
এই হাই প্রোফাইল অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যে মহিলা বিজ্ঞানীর উপর ভরসা রাখছে ইসরো,তিনি হলেন তিনি হলেন ইসরোর রকেট সায়েন্টিস্ট ভি.আর ললিতাম্বিকা। ভারতের “হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট প্রোগ্রামের” এই গুরু দায়িত্বের জন্য ইসরো নিয়েছে গবেষক ভি.আর ললিতাম্বিকা-কে।
কে এই মহিলা গবেষক?
ভি.আর ললিতাম্বিকা ১৯৬২ সালে ভারতের কেরালার তিরুবনন্তপুরমে জন্মগ্রহণ করেন। কেরালার থুম্বা রকেট পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি তার বাড়ি হওয়ায়, তিনি শৈশব থেকেই ইসরোর প্রতি আকৃষ্ট হন। প্রাথমিকভাবে,তাঁর বিজ্ঞানের সংস্পর্শের সূচনা তাঁর দাদার কারণে হয়েছিল, যিনি বাড়িতে নিজেই লেন্স, মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি গ্যাজেট তৈরি করতেন এবং ইসরোর কাজ সম্পর্কে তাকে আপডেট রাখতেন। তাঁর দাদা একজন গণিতবিদ,জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গ্যাজেট নির্মাতা ছিলেন। তার বাবাও ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার।
ইসরোর মতো প্রতিষ্ঠানে তিন দশকের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও আইআইটি-মাদ্রাজ ও আইআইএসসি বেঙ্গালুরুর মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েও পড়তে পারেননি তিনি। তিরুবনন্তপুরমের কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকের প্রথম স্থান পাওয়ার পর ‘গেট’ পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করেছিলেন। ওই কলেজ থেকেই কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সারেন। তিনি ইসরোতে যোগদানের আগে দুটি কলেজে শিক্ষকতার কাজ করেন।
তিনি অ্যাডভান্সড লঞ্চ ভেহিকল টেকনোলজির বিশেষজ্ঞ। লঞ্চ ভেইকলের প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষতার জন্য অ্যাস্ট্রোন্যটিক্যাল সোস্যাইটি অফ ইন্ডিয়া পুরস্কৃত করেছিল ললিথাম্বিকাকে। 1988 সালে, তিনি বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার (ভিএসএসসি),তিরুবনন্তপুরম এ যোগদান করেন। তিনি ছিলেন বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর। তিনি এমন একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যা রকেট নিয়ন্ত্রণ এবং গাইডেন্স সিস্টেমের নকশা করেছে। তিনি অগমেন্টেড স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (এএসএলভি), পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি) এবং জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (জিএসএলভি) এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য লঞ্চ ভেহিকেল (আরএলভি) সহ বিভিন্ন ইসরোর রকেট গবেষণার সাথে কাজ করেছেন। তিনি দেশের একশোর বেশি মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন।মহাকাশ গবেষণায় প্রায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই অভিজ্ঞ কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারের। ইতিমধ্যেই ভারতবাসী ওনাকে “রকেট ওম্যান” বলে চিনতে শুরু করেছে।
বলে রাখা ভালো,১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে মহাকাশে গিয়েছিলেন পাইলট রাকেশ শর্মা। সোভিয়েত ইউনিয়ানের Soyuz T-11 মিশনের অংশ হিসাবে তিনি মহাকাশে গিয়েছিলেন। এরপরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলা ও সুনিতা উইলিয়ামস মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কলম্বিয়া মহাকাশযান চেপে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল কল্পনা চাওলার। দেখতে গেলে এরা সবাই কিন্তু কোন না কোনভাবে ভারতীয়।তাই আমরা ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করতেই পারি।
The first phase of payload selection for ISRO’s Human Space Flight Programme or better known as #Gaganyaan has been completed!https://t.co/hzIJQda3J6
— Mumbai Mirror (@MumbaiMirror) January 22, 2020
Your email address will not be published. Required fields are marked *